জবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসলেন ৪৬ বছর বয়সী তপু

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বি’ ইউনিটে (কলা ও আইন অনুষদের) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন নওগাঁর তৌহিদুর রহমান তপু । দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে সুস্থ হয়ে আবার পরীক্ষায় বসেছেন তপু , বর্তমানে তার বয়স ৪৬ বছর ।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলা ও আইন অনুষদের (‘বি’ ইউনিটের) প্রথম শিফটে (সকাল ১০টা থেকে ১১টা) ভর্তি পরীক্ষা দেন তৌহিদুর রহমান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে তাঁর আসন পড়েছিল।
রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে দেখা যায়, তৌহিদুর রহমান নওগাঁর এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৪.৬৩ জিপিএ পেয়েছেন এবং ২০২৪ সালে গয়ড়া তেঁতুলিয়া ডি এম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ৪.৬৪ জিপিএ পেয়ে আলিম পাস করেন । তবে তৌহিদুর রহমানের দাখিল ও আলিম পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে দেখা যায় তার জন্ম তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫। কিন্তু বাস্তবিকতায় তার বয়স কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তৌহিদুর রহমান জানান, তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর তীরে। তিনি নওগাঁ সরকারি কে ডি স্কুলে মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন। ১৭ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে যান। ১৯৮৯ সালে তার মানসিক রোগ ধরা পড়ে । অসুস্থ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় আর পড়াশোনা করেননি। ২৭ বছর পর আবার পুনরায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। সুস্থ হওয়ার পর ২০১৪-১৫ সালে আবার পড়াশোনায় শুরু করেন। ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিতে চাইলেও আবারও মাদকাসক্ত সেন্টারে তাকে প্রেরণ করা হয়। ২০১৯ সালে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, দাখিল এবং আলিম পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ইংরেজি প্রস্তুতি তেমন ভালো না। তারপরও চেষ্টা করব। যদি এই বছর জগন্নাথে ভর্তির সুযোগ না হয়, আগামী বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেব, ভর্তির সুযোগ পাব ইনশা আল্লাহ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, শুনেছি একজন বয়স্ক ব্যক্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই, তবে সে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে কি না, সেটা পরবর্তী সময়ে খতিয়ে দেখা হবে।
তৌহিদুর রহমানের বলেন, একাই পরীক্ষা দিতে এসেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ভালো হয়নি। এখানে তিনি ভর্তির সুযোগ পাবেন না। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৪ নম্বর ভালোভাবে পূরণ করতে পেরেছেন। লিখিত অংশে ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ৪৮ নম্বর পরীক্ষা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। প্রস্তুতি না থাকায় ভালো করতে পারেননি। ইংরেজি পরীক্ষায়ও বেশ দুর্বল। ৪৮ নম্বরের লিখিত পরীক্ষাও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পর্ব হলে তিনি ভালো পরীক্ষা দিতে পারতেন।
তিনি আরও বলেন , তাঁর বর্তমান বয়স ৪৬ কিংবা ৪৭ বছর। সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে আগামী ১৫ বছর তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। টিউশনি করে সময় পার করেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে একমাত্র মা আছেন। বিয়ে করেছিলেন পরে তালাক হয়ে যায়, সন্তানও নেই। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশনি করান, তাদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
তপু বলেন, ‘সবাই আমাকে মানসিক রোগী বলত, কিন্তু আমি চাই এই ভুল ধারণা পরিবর্তন হোক। পড়াশোনার মধ্য দিয়ে আমি সমাজকে দেখাতে চাই, অসুস্থ হলে আমরাও অন্যদের মতো স্বপ্ন দেখতে পারি। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। সামনের বছরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। যেখানে দুইবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, সেখানেই পরীক্ষা দিবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়াই এখন একমাত্র লক্ষ্য।’