স্বেচ্ছায় অবসর চেয়েও বহাল উচ্চ পদে, খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে ঘিরে বিতর্ক

একজন সরকারি কর্মকর্তা শারীরিক অক্ষমতা ও মানসিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন। এ ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তরের ভেতরে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ১৪ মে ২০২০ তারিখে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সিলেট কার্যালয়ের মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবর স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন পাঠান (স্মারক নং: ১৩.০১.০০০০.২৫০.৩২.০০৬.১৯.১৫৩১)। বর্তমানে তিনি খুলনায় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বরিশাল ও সিলেটে একই দায়িত্বে ছিলেন।
তার আবেদনপত্রে উল্লেখ ছিল, ২১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালে খাদ্য ক্যাডারে যোগদানের পর ১৭ বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় পরিবার থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকায় শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্নায়বিক জটিলতা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে অক্ষমতার কথা উল্লেখ করে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের অনুরোধ জানান।
কিন্তু সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন সাধারণত অবিলম্বে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, মামুনুর রশিদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। কীভাবে তিনি আবার চাকরিতে বহাল হলেন, তা নিয়েই এখন অধিদপ্তরে বিস্ময় ও আলোচনা চলছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমান বলেন, “তিনি আবেদন করেছিলেন, কিন্তু মন্ত্রণালয় আবেদনটি গ্রহণ করেনি। কিছুদিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় দুই বছর আউট অব সার্ভিস ছিলেন। পরে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ কি না—এটা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখে।”
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, “যদি তিনি সত্যিই স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে থাকেন, তবে পুনর্বহালের বিষয়টি বোঝা কঠিন। সরকারি চাকরিতে এমনটা সহজে হওয়ার কথা নয়। এখানে হয়তো কোনো প্রশাসনিক গ্যাপ রয়েছে। আপনারা তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই করুন।”
অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ মামুনুর রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। মহাপরিচালক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কর্মকর্তাদের একটি অংশের দাবি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মামুনুর রশিদ স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করার পরও বহাল তবিয়তে চাকরিতে রয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।