ঢাকা শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনের ক্যাম্পাস

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কমিটিতে

'মুজিববর্ষে বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে'

সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পদায়ন করা হয়েছে।

পদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন— তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাসিন আজফার পান্থ ও সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বি।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে ছাত্রলীগ ঘোষিত ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদেরকে পদায়ন করা হয়।

হাসিন আজফার পান্থ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। থাকেন বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলে। আর ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী, তিনি থাকেন তিতুমীর হলে।

এর আগে, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। সেই প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

এরপর ওই বছর ১৬ নভেম্বর বুয়েটের রেজিস্টার অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব বা সোসাইটি ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দল বা এর অঙ্গসংগঠনের অথবা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হইতে বা তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে না। শিক্ষার্থীগণকে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বর্ণিত নিয়মসমূহ যথাযথভাবে পালন করিতে হইবে এবং ইহা অমান্য করিলে অধ্যাদেশে বর্ণিত বিধি মোতাবেক তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (যেকোনো মিডিয়ার মাধ্যমে) কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা; রাজনৈতিক পদ ধারণ করা বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা (যার মধ্যে প্রচারণা, মিছিলে অংশগ্রহণ, সভা, গ্রাফিতি বা পোস্টার লাগানো ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত), বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করা; অন্যদের উপরোক্ত কার্যকলাপে অংশ নিতে বাধ্য করা, প্ররোচিত করা বা অনুপ্রাণিত করলে সতর্কতা, জরিমানা আরোপ, যেকোনো সময়ের জন্য বহিষ্কার কিংবা আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এখনও কোনো কমিটি বা ছাত্ররাজনীতি থাকতে পারবে না। কেউ যদি ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে কোনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, সেটা আমাদের বিধি-নিষেধের মধ্যে পড়ে না।

চলমান কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পদ ধারণ করার প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। এখন তারা (দুজন পদধারী) যদি ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে, এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েটে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, থাকলে কিভাবে পরিচালিত হবে, এটা  বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিষয়। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাদের অভ্যন্তরীণ ছাত্র রাজনীতি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিরোধার্য হিসেবে গণ্য করব।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যে দুজন শিক্ষার্থীকে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি, তারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দেশব্যাপী যে আমাদের অন্যান্য কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলো সমন্বয় করবে। বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই।’

কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পদ ধারণ করলে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, সে সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বুয়েট প্রশাসন তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, একজন ছেলে মেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্ররাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না। এটা তাদের আইনগত অধিকার নেই। এটি করার কোনো সুযোগই নেই। যদি তারা এটি করে (শাস্তির আওতায় আনে), তাহলে এটা বেআইনি ও অনৈতিক প্রক্রিয়া হবে।’


সর্বশেষ