ঢাকা শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনের ক্যাম্পাস

মাহে রমজানের গুরুত্ব

'মুজিববর্ষে বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে'
ছবি:সংগৃহিত

পৃথিবীতে মুসলিমদের অন্যতম একটি সময় হলো রমজান মাস। কারণ এই মাস হলো রহমতের মাস, বরকতের মাস, মাগফেরাতের মাস। এই মাসকে গুনাহমুক্তির মাসও বলা হয়। এই মাসে যে গুনাহ থেকে মুক্তি না পেলো তার মতো অভাগা আর কেউ নেই। তাই এই মাসে অতীতের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নেওয়া যেমন জরুরি, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ত্রুটিযুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি: ২২৩৩)

এই মাসে যারা আল্লাহকে ভয় করে না, গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করে না, তারা নিতান্তই হতভাগা। তাদের রোজার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি: ১৮০৪)

অপর হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি: ৫৬৩৬)

রমজান মাস হলো তাকওয়া অর্জনের মাস। তাকওয়ার মূল কথা হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার মূল কারণই হলো তাকওয়া অর্জন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

সুতরাং পবিত্র মাসে গুনাহ পরিত্যাগ করার বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে অতীতের গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নেওয়ার জন্য বেশি বেশি দোয়া, তারাবি, নফল নামাজ আদায় করতে হবে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমাদান তথা তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি: ১৮৭৯)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)

রমজানে গুনাহ মাফ করাতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। তারা অভিশপ্ত। এক হাদিসে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) মিম্বরে উঠলেন এবং বলেন—আমিন, আমিন, আমিন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মিম্বরে উঠছিলেন এবং বলছিলেন, আমিন, আমিন, আমিন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই জিবরাইল আমার কাছে এসেছিল। সে বলল, যে রমজান পেল অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না, সে জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন। যে তার মা-বাবা উভয়কে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল অথচ তাদের মাধ্যমে সে পুণ্যের অধিকারী হতে পারল না এবং সে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন। যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করল না এবং মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৮৮)

তাই আসুন, গুনাহ পরিত্যাগ করি। রমজানের দিনগুলোতে আমরা নিজেদের গুনাহ মাফের চেষ্টা করি। আল্লাহর কাছে তাওবা করি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীকে।’ (সুরা বাকারা: ২২২)

প্রতিদিনেরক্যাম্পাস/এআর


সর্বশেষ