ঢাকা শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনের ক্যাম্পাস

কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপেক্ষিত চবি ছাত্রলীগ, হতাশ নেতাকর্মীরা

'মুজিববর্ষে বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে'

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০১ সদস্যের একটি পদেও জায়গা করে নিতে পারেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী। এতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম চট্টগ্রাম নগরকেন্দ্রিক হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দিকে একচোখা নীতি অনুসরণ করে। যে কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজধানীর বাইরের এসব নেতাকর্মী। এতে ঢাকার বাইরে ত্যাগী নেতাকর্মীরা সক্রিয় রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন সাবেকরা।

চবি শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, যারা সবসময় ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখের সামনে থাকে, তারাই কমিটিতে স্থান পায়। অথচ যারা ঢাকার বাইরে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, নির্যাতিত হয়, তাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় না। ঢাকায় থাকাই যেন কমিটিতে স্থান পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা। এ যেন 'চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল'।

শুধু তিনিই নন, তার মতো আরও বেশ কয়েকজন নেতার অভিযোগ, প্রতিবারের মতো এবারও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপেক্ষা করা হয়েছে চবি ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন চবির একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

হতাশা প্রকাশ করে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমা সীমা তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আর নয় সময় উদ্দেশ্যহীন মিছিলে।’ পোস্টের কমেন্ট বক্সে দেখা যায়, অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন।

শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শরীফ উদ্দিন বলেন, আগামী বছর নির্বাচন। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে চবি ছাত্রলীগ। দেশের ক্রান্তিলগ্নেও সব আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগের এই শাখা ইউনিট। কিন্তু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরাবরের মতো এবারও অবমূল্যায়িত চবি ছাত্রলীগ।

শাখা ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, চবি ছাত্রলীগ দেশের অন্যান্য যেকোনো ইউনিটের চেয়ে ক্রিটিক্যাল ইউনিট। এই ইউনিটের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ সময় শিবিরের সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে ছাত্রলীগের পতাকাকে সমুন্নত রেখেছে। অসংখ্য নেতাকর্মী শিবির সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন দিয়েছে ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এই ইউনিট থেকে কয়েকজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হলে কর্মী হিসেবে আমাদের বিষয়টা আনন্দ দিতো।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে চবির অবমূল্যায়ন হতাশাজনক উল্লেখ করে চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রকিবুল হাসান দিনার বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো ইস্যুতে সবসময় তৎপর হলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বরাবরই এই ইউনিট পিছিয়ে। তবে বর্তমান সময়ে অবমূল্যায়নের জন্য নিজেরাও কিছুটা দায়ী বলে আমার মনে হয়৷ চবি ছাত্রলীগ সভাপতির একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, সারা বছর নানা ঝামেলায় শিরোনাম হয়ে কেন্দ্রের কাছে বিরক্তির কারণ হওয়া এবং নিজেদের গুরুত্ব তুলে ধরতে না পারাটাও অবমূল্যায়নের অন্যতম কারণ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জামান নুর বলেন, শিবিরের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। চবি ছাত্রলীগের পতাকা উড়াতে গিয়ে আমাদের অনেকেই জীবন, ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন। এদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়িত হয়নি। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মূল্যায়ন করলে নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হবে। রাজধানীর বাইরেও নেতৃত্ব উঠে আসবে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও দায়িত্বের বি-কেন্দ্রীকরণের নীতিও পূরণ হবে।

তবে সদ্যঘোষিত ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছেন চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী নূর-উন-নবী প্রিন্স। তিনি বলেন, ঢাবি, ঢাকা মহানগর এবং ঢাকাস্থ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা রাজনীতি করার পাশাপাশি কেন্দ্রের দৃষ্টি সহজে আকর্ষণ করতে পারেন, যা চবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয় না। চবি থেকে এক সময় ৬/৭ জনকে কেন্দ্র থেকে মূল্যায়ন করা হতো। এখন হচ্ছে না। চবির মতো একটি ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও বেশি নেতাকর্মীর স্থান পাওয়া উচিত বলে মনে করি।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু  বলেন, কেউ আসেনি এটা সত্য নয়। একজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ওনারা রেখেছেন। তবে, আমাদের এখান থেকে আরও কয়েকজন নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলে ভালো লাগত।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, জামায়াত-শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে অবস্থান নিশ্চিত করেছে চবি ছাত্রলীগ। তাদের থেকে অন্তত সাত-আট জন কেন্দ্রতে রাখা উচিত বলে মনে করি। এখান থেকেও জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সে জায়গায় এই ইউনিট উপেক্ষিত হয়েছে।


সর্বশেষ