ঢাকা শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনের ক্যাম্পাস
  • জাতীয়
  • কোটা আন্দোলন ঘিরে যা যা ঘটেছে

কোটা আন্দোলন ঘিরে যা যা ঘটেছে

প্রজ্ঞাপনকে চূড়ান্ত সমাধান মনে করে না আন্দোলনকারীরা, চার দফা আল্টিমেটাম
'মুজিববর্ষে বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে'
শুক্রবার সংঘর্ষ চলার সময় ঢাকার একটি এলাকার সহিংসতার ছবি - ছবি : বিবিসি

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, যা এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। গত এক সপ্তাহের সহিংসতায় নিহত হয়েছে দেড় শ’র বেশি মানুষ, গ্রেফতার হয়েছে সহস্রাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে। পরে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায়।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায়। পরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটার সিস্টেমের ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেয় সরকারকে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে মঙ্গলবার কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

গত শুক্রবার রাত থেকে জারি করা কারফিউ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে খুলছে অফিস-আদালত। তবে তার জন্য নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার আবার সীমিত আকারে চালু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের সহিংসতায় নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক বেশি মানুষ, গ্রেফতার হয়েছে সহস্রাধিক। সবশেষ চার দফা দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

কোটা আন্দোলন ঘিরে এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে :

- কোটা আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলাদেশে যে কারফিউ জারি করা হয়েছে, তা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে দুপুর ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এই সময়ে সেনা মোতায়েন থাকবে।

- বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকল অফিস, আদালত, ব্যাংক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম খোলা থাকবে। তবে কারফিউর কারণে নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।

- কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রোববার আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছে, তার আলোকে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশের সরকার।

- প্রজ্ঞাপনকে চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে না মেনে সারা দেশে কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট সংযোগ চালু, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও সারা দেশের সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

- কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ অন্তত দেড় শ’ মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

- বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা পাঁচ দিন বাংলাদেশে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার রাতে আবার সীমিত আকারে চালু হয়েছে।

- সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই দিনের অভিযানে সহস্রাধিক মানুষ গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যাদের মধ্যে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রয়েছে।

- কোটা সংস্কারের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, যা এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আগুন দেয়া হয়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ অনেক এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। নরসিংদী কারাগারে হামলা চালিয়ে ৮০০’র বেশি বন্দী পালিয়ে যায়।

- সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যায়। সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

- বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলে শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

- কারফিউর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার জনগণকে চরম বিপদ ও দুর্ভোগের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছে।

- সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।

 

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মামলায় ঢাকায় দুই দিনে আটক ১,১১৭ জন কোটা সংস্কার ইস্যুতে আন্দোলন ঘিরে সংঘাত ও সহিংতার ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

দুই দিনে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা থেকেই ১ হাজার ১১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি।

ডিএমপি’র মিডিয়া শাখার ডিসি গোলাম ফারুক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০১ জনকে, বাকিদের গ্রেফতার রোববার।’

গ্রেফতারকৃতদের রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেন ঢাকার সিএমএম আদালতে গিয়ে দেখতে পান, ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে আনা হচ্ছে। তাদের অনেককে রিমান্ড না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আবার গ্রেফতারকৃত কোনো কোনো ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিচ্ছে পুলিশ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় নানা অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে রোববার পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

 

প্রজ্ঞাপনকে চূড়ান্ত সমাধান মনে করে না আন্দোলনকারীরা, চার দফা আল্টিমেটাম কোটা সংস্কার করে জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনকে চুড়ান্ত সমাধান হিসেবে মনে করছে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

একই সাথে চার দফা দাবি জানিয়ে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই প্লাটফর্ম।

কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে আদেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এরপর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সংগঠকরা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মাহিন সরকার।

এর আগে গত তিন দিনে তারা আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়ার কথা জানালেও এই প্রথম মূল সংগঠকরা এক হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

এই সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে যে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

যে কারণে সারাদেশে কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট সংযোগ চালু, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ও সারাদেশের সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়।

এই চার দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এই চার দাবি না মানা হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

 

দেড় শতাধিক মামলায় হাজারের বেশি গ্রেফতার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেড় শ’র বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও র‍্যাব।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৩০টিই মামলায় ৫১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মুনিম ফেরদৌস বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, গত তিন দিনে সারাদেশে ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

এর মধ্যে কেবল সোমবারই ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃতদের একটা বড় অংশই বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।

তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জহিরউদ্দীন স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অনেককে।

নেতা-কর্মীদের এভাবে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

হেনস্থা করার জন্যই কাল্পনিক অভিযোগ তুলে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সূত্র : বিবিসি


সর্বশেষ