ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনের ক্যাম্পাস
শিরোনাম
  • সোহরাওয়ার্দী কলেজ লিও ক্লাবের লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল চার্টার অর্জন ঢাকা কলেজ ছাত্রফ্রন্টের উদ্যোগে  মাওলানা ভাষানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত  হল প্রভোষ্টদের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা কলেজে বিক্ষোভ কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন শেষ ব্রাজিলের এইচএসসির আরো ৪ পরীক্ষা স্থগিত আলোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালো - বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিনব্যাপী ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৭ জন শিক্ষার্থী স্মারকলিপি প্রদান শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার করা হবে না ; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
    • মতামত
    • সংবিধানের আলোকে কোটা সংস্কার আবশ্যক

    সংবিধানের আলোকে কোটা সংস্কার আবশ্যক

    ইকতেদার আহমেদ
    'মুজিববর্ষে বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে'
    সংবিধানের আলোকে কোটা সংস্কার আবশ্যক

    ‘কোটা একটি ইংরেজি শব্দ। ইংরেজিতে কোটার সমার্থক প্রপোরশন্যাল শেয়ার যার বাংলা অর্থ আনুপাতিক অংশ। কোটা শব্দটি দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে ব্যবহারের ফলে এটি অনেকটা প্রচলিত বাংলা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে বর্তমানে ব্যাপকভাবে সর্বক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলায় কোটা বলতে আমরা আনুপাতিক অংশ বা নির্দিষ্ট ভাগ বুঝলেও আক্ষরিকভাবে আমরা সবসময় বলনে ও লিখনে কোটা শব্দটিকেই ব্যবহার করে আসছি। আমাদের সংবিধানে কোথাও স্পষ্টভাবে কোটার বিষয় উল্লেখ না থাকলেও নারী বা শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতি বা উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য প্রচলিত নীতি ও অধিকারের ব্যত্যয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

    বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অন্যতম মূলনীতি হলো সুযোগের সমতা। এ বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ এর দফা (১) (২) ও (৩) এ পর্যায়ক্রমিকভাবে বলা হয়েছে- ১. সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। ২. মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ সুবিধা দান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৩. জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

    সংবিধান প্রণয়নকালীন অনুচ্ছেদ ১৯ দফা (১) ও (২) সমন্বয়ে গঠিত ছিল। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদটিতে দফা (৩) সন্নিবেশিত হয়।

    বাংলাদেশের সংবিধানে যেসব অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এসব অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এর দফা (১) অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এ অধিকারটি যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বলবৎ এর দাবি করে প্রতিকার চাইতে পারে যদিও রাষ্ট্র পরিচালনার যেকোনো মূলনীতির কারণে অনুরূপ অধিকারবঞ্চিত ব্যক্তিকে সমসুযোগ প্রদান করা হয়নি।

    সংবিধানে মৌলিক অধিকারবিষয়ক যে দু’টি অনুচ্ছেদে বিশেষ বিধান প্রণয়নের বিষয় উল্লিখিত হয়েছে এর একটি হলো অনুচ্ছেদ ২৮ যা বিভিন্ন কারণে বৈষম্যবিষয়ক এবং অপরটি অনুচ্ছেদ ২৯ যা সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতাবিষয়ক। উপরোক্ত দু’টি অনুচ্ছেদের মধ্যে প্রথমোক্তটির দফা (৪) এবং শেষোক্তটির দফা (৩)(ক) বিশেষ বিধান প্রণয়নবিষয়ক যা ভাবার্থগতভাবে কোটাপ্রথা সংরক্ষণের সপক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে।

    সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ এর দফা (৪) এ বলা হয়েছে- নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হতে এ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না, অপর দিকে অনুচ্ছেদ ২৯ এর দফা (৩)(ক) এ বলা হয়েছে- এ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।

    আমাদের দেশে বর্তমানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ব্যতীত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা মেনে চলা হয়। বর্তমানে কোটা হারের যে বিভাজন তা হলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি শতকরা ৩০ ভাগ, নারী ১০ ভাগ, জেলা ১০ ভাগ, উপজাতি ৫ ভাগ, প্রতিবন্ধী ১ ভাগ সর্বমোট ৫৬ ভাগ।

    পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজের যেকোনো অনগ্রসর বা অবহেলিত বা বঞ্চিত অংশ বা শ্রেণীর দেশে বা সমাজে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোটাপ্রথা মেনে চলতে দেখা যায়। এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা এবং কোটা প্রথার সুফল ভোগ পরবর্তী যখন যেকোনো অনগ্রসর বা অবহেলিত বা বঞ্চিত অংশ বা শ্রেণীর উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের অবকাশ ঘটে তখন এর হার কমিয়ে আনা হয় বা ক্ষেত্রবিশেষে রহিত করা হয়।

    আমাদের দেশে কোটাপ্রথা প্রবর্তনকালীন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের শতকরা ৩০ ভাগ কোটা প্রদানের পেছনে যে যৌক্তিক কারণ ছিল তা হলো- মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তাদের অনেকের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের কারণে পরিবারগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা পূরণকল্পে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। এ পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্যের কারণে কোটাপ্রথার সুবাদে নির্ধারিত যোগত্যাধারী মুক্তিযোদ্ধারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরির সুযোগ লাভ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে চাকরি হতে অবসরের বয়স অপরাপরদের চেয়ে এক বছর অধিক করার কারণে তারা বর্তমানে ৬০ বছরে উন্নীত হওয়া পরবর্তী অবসরে যান।

    মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন ও সহায় সম্পদের মায়া বিপন্ন করে আত্মত্যাগের অভিপ্রায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের কেউই বিনিময় প্রত্যাশী ছিলেন না এবং চাকরি কোটা বা বয়স বৃদ্ধি কোনোভাবেই তাদের আত্মত্যাগের সাথে তুল্য নয়। যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও চেতনাকে লালন করে মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে মুক্ত করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। স্বাধীনতার প্রায় ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও আমরা যেমন উপরোক্ত চেতনাকে লালন করে এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সমর্থ হইনি অনুরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিরা সমচেতনায় একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ এ নিশ্চয়তা কী তাদের সবার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব? এ বাস্তবতায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা সংরক্ষণের অবকাশ আছে কি-না সে প্রশ্নটি এসে যায়। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের অনগ্রসর বা অবহেলিত বা বঞ্চিত অংশ বা শ্রেণী বলার অবকাশ আছে কি-না এটি ভাবার বিষয়। আর যদি অবকাশ না-ই থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(৪) ও ২৯(৩)(ক) আকৃষ্ট করার সুযোগ কোথায়?

    ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি একটি উপাধি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান ছিল তাদের অনেককে এ উপাধিটি দেয়া হলেও ৮ নভেম্বর, ২০১৬ সাল পূর্ববর্তী এ শব্দটি সংজ্ঞায়িত হয়নি। ওই তারিখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অবলোকনে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে বলা হয় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’

    প্রজ্ঞাপনটিতে আরো বলা হয়- এদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেসব বাংলাদেশী পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং যেসব বাংলাদেশী বিশিষ্ট নাগরিক বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীনে কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে

    দায়িত্ব পালন করেছেন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সাথে সম্পৃক্ত এমএনএগণ ও এমপিএগণ (গণপরিষদ সদস্য), পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত নারীগণ (বীরাঙ্গনা), স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীবৃন্দ এবং দেশ ও দেশের বাইরে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশী সাংবাদিকগণ, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়বৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার, নার্স ও সহকারীবৃন্দ রয়েছেন।

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এবং তদসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ পর্যালোচনায় দেখা যায় সংজ্ঞা ও বিশ্লেষণ হতে মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রাম-বাংলার সাধারণ জনমানুষের অন্তর্ভুক্ত যেসব পরিবার নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ গণ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে খাদ্য, পথ্য, তথ্য, বস্ত্র, আশ্রয় ও অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর কর্তৃক হত্যা, লুণ্ঠন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের কারণে চরমভাবে নিগৃহীত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের এবং যারা দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাদেরও বাদ দেয়া হয়েছে। এদের সহযোগিতার কারণেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সফলতা পেয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা হতে এদের বাদ দেয়া মুক্তিযুদ্ধকেই অবমাননার শামিল। তাছাড়া সংজ্ঞার মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্তি না করার কারণে সংজ্ঞাটি যে অসম্পূর্ণ এটি স্পষ্টত প্রতিভাত। আর তাই দীর্ঘদিন যাবৎ মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি সংজ্ঞায়িত না করায় যে বিতর্কের অবসান হয়নি বর্তমানে সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ হওয়ায় সে বিতর্কের অবসান নয়; বরং নতুনভাবে সূচনা হয়েছে।

    নারী ও জেলা নামে বর্তমানে ১০ ভাগ করে যে ২০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয় তা দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য লাভের কারণে উভয় শ্রেণীর অনগ্রসর বা অবহেলিত বা বঞ্চিত অবস্থানের উত্তরণে তাদের প্রধান শ্রেণীর সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে বা আসার উপক্রম ঘটিয়েছে।

    উপজাতি নামে প্রারম্ভিক অবস্থায় যে কোটাপ্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল তা বর্তমানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করে। উপজাতিরা দীর্ঘদিন কোটার পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য ভোগ করে আসতে থাকলেও তাদের সমপর্যায়ের অপর তিন গোষ্ঠী সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য লাভ করেনি। আর তাই অপর তিন গোষ্ঠী যেন উপজাতিদের সাথে সমবিবেচনায় নিজেদের অনগ্রসরতা বা অবহেলা বা বঞ্চনার অবসান ঘটাতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সচেষ্ট হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

    কোটাপ্রথা প্রবর্তনকালীন ‘প্রতিবন্ধী’ নামীয় কোটা ছিল না। প্রতিবন্ধীদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য বা পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটির চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ বা সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

    সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা ৫৬ ভাগ যদি কোটাপ্রথার জন্য সংরক্ষণ করা হয় সেক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় কৃতকার্য হওয়া মেধাবীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রার্থিত চাকরি লাভে ব্যর্থ হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কোটাপ্রথার পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্যে একজন কোটাধারী যেখানে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ন্যূনতম নম্বর পেয়ে চাকরি লাভের সুযোগ পায় সেখানে ন্যূনতম নম্বর হতে শতকরা ১০ ভাগের অধিক নম্বর প্রাপ্ত হয়েও অনেক কোটাবহির্ভূত মেধাবীর চাকরি লাভের সুযোগ ঘটে না। এ বৈষম্য যেকোনো মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীর জন্য মর্মবেদনা ও পীড়াদায়ক।

    সংবিধান ও আইন মেনে চলা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য কর্তব্য। কোটা বিষয়ে সংবিধানের যে অবস্থান তা হতে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে কোটাপ্রথা অনুসৃত হওয়ার সুবাদে কোটাধারীদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটেছে। এমতাবস্থায় উপরোল্লিখিত আলোচনার আলোকে সামগ্রিক বিবেচনায় কোনো কোটার সম্পূর্ণ বিলোপ, কোনোটির সংস্কার আবার কোনোটির সংরক্ষণের দাবি রাখে।

    লেখক: সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

    E-mail: iktederahmed@yahoo.com


    সর্বশেষ